Gulshan, Dhaka - 1212
+8809696223229
mail@niloyparvez.com

জীবন ও সংস্কার: পরিবর্তনের পথে এগিয়ে চলা !

জীবন এক গতিময় প্রবাহ, যার প্রতিটি বাঁকে লুকিয়ে থাকে নতুন অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও আত্মোপলব্ধির সুযোগ। এই প্রবাহে আমরা প্রত্যেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চিন্তা, অভ্যাস ও বিশ্বাস নিয়ে চলি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসবের অনেক কিছুই বদলায়, এবং সেই বদলকে আমরা বলি সংস্কার। সংস্কার মানে শুধু কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান নয়; বরং এটি আমাদের চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিফলন।

মানুষ যখন জন্ম নেয়, তখন তার মধ্যে কোনো পূর্বনির্ধারিত চিন্তাধারা থাকে না। সে বেড়ে ওঠে পরিবার, সমাজ ও পরিবেশের প্রভাবে। এই প্রভাবগুলোর মাধ্যমেই গড়ে ওঠে তার প্রাথমিক জীবনদর্শন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খোঁজে, এবং তখনই তার চিন্তায় পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন যদি তা যুক্তিবাদী, মানবিক ও উন্নয়নমুখী হয় তবেই তা সংস্কার হিসেবে গণ্য হয়।

সংস্কার কখনো ব্যক্তিগত হয়, কখনো সামষ্টিক। একজন ব্যক্তি যখন ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের অভ্যাস বদলায়, নিজের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠে, তখন সেটাই ব্যক্তিগত সংস্কার। উদাহরণস্বরূপ, ধূমপান, রাগ, অলসতা বা নেতিবাচক মনোভাব ত্যাগ করে কেউ যদি সুস্থ, ইতিবাচক ও পরিশ্রমী জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়, তবে সেটি তার ব্যক্তিগত জীবনের এক বড় সংস্কার।

অন্যদিকে, সমাজের মধ্যে যেসব কুসংস্কার বা অনুশাসন মানুষকে পিছিয়ে দেয়, সেগুলোকে পরিবর্তন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার। বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি বৈষম্য, ধর্মীয় গোড়ামি বা জাত-পাতের বিভাজন-এসব কিছুই সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নেতিবাচক প্রভাব। কিন্তু যখন সমাজ এগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়, আইনি ও শিক্ষাগত মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তখনই আমরা বলতে পারি-সংস্কার ঘটছে।

জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য তখনই প্রকাশ পায়, যখন মানুষ নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে এবং সেগুলো থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে। একজন প্রকৃত মানুষ শুধু নিজের উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং অন্যদের মধ্যেও পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলেন। তিনি সমাজের অন্ধকার কোণগুলোতে আলো ফেলেন, কুসংস্কারকে চ্যালেঞ্জ করেন, এবং একটি মানবিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখেন।

তবে সংস্কার কখনো জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। এটি একটি ধীর, স্বাভাবিক ও যুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া। কারো বিশ্বাস বা অভ্যাস পরিবর্তন করতে চাইলে প্রথমে তার সঙ্গে যুক্তি, সহানুভূতি ও বাস্তবতা দিয়ে কথা বলতে হয়। শিক্ষা, সাহিত্য, গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি-এসবই সংস্কারের বড় মাধ্যম হতে পারে, যদি এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়।

জীবন ও সংস্কার পরস্পর পরিপূরক। জীবনের উন্নতি চাইলে সংস্কার দরকার, আর সংস্কার সম্ভব হয় জীবনের অভিজ্ঞতা ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে। ব্যক্তি হোক বা সমাজ যদি তারা নিজের ভুল বুঝে তা শুধরে নিতে পারে, তবে ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে আরও সুন্দর, মানবিক ও উন্নয়নশীল।

সংস্কার আমাদের শেখায়—অন্ধ অনুসরণ নয়, যুক্তির অনুসরণ করো। সংস্কার বলে—যা চলছে তা ভালো না-ও হতে পারে; তাই নতুন করে ভাবো, ভালোটা খুঁজে নাও। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, সংস্কার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষ মাত্রেই পরিবর্তনশীল, আর সেই পরিবর্তনই আমাদের আশার আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © 2025 InfoX IT Limited. All Rights Reserved.